হঠাৎ প্রাণোচ্ছল মানুষ শেলী রাহমান। সকালেও ঘরের কাজ সব সামলেছেন। ঘরোয়া অনুষ্ঠানের ব্যস্ততায় প্রেসার কমানোর ওষুধ সেবনের নিয়মে ছেদ পড়েছে। এ সুযোগটিই নিয়েছে ঘাতক ব্যাধি স্ট্রোক। ঘুমের মধ্যেই স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মস্তিষ্কের বাঁ পাশে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটায় মস্তিষ্কের ওই অংশ তার কর্মক্ষমতা হারিয়েছে। ফলে শরীরের ডান পাশ প্যারালাইসিস হয়ে গেছে। রাতেই আইসিইউ সাপোর্ট পাওয়াতে তার জীবন বেঁচেছে। কিন্তু প্যারালাইসিস তাকে নিস্তার দেয়নি। সাত দিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও তিনি হাত-পা নাড়াতে পারতেন না। সারা দিনই বিছানাবন্দি। চিকিৎসক ও তার এক কাছের আত্মীয়ের পরামর্শে বাসায় ফিজিওথেরাপি নেয়া শুরু করলেন। মাস পার হয়ে গেলেও তেমন উন্নতি পরিলক্ষিত না হওয়ায় একজন ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে পুনর্বাসন কেন্দ্রে ভর্তি হলেন। সুচিকিৎসায় তিন মাসেই তিনি নব্বই শতাংশ সুস্থ হয়ে গেলেন। দুঃখের বিষয় হল বেশিরভাগ স্ট্রোক রোগীর জীবনের গল্প এমন নয়। সচেতনতার অভাব, চিকিৎসা নিতে অনীহা ভুল পরামর্শ রোগী জীবনের বিপদ আরও বাড়িয়ে দেয়। প্যারালাইসিস রোগী চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তাই প্রস্রাব পায়খানা, গোসল, খাওয়া সব কাজের জন্যই তাকে অন্যের মুখাপেক্ষী হতে হয়। প্যারালাইসিস রোগী সারা দিন ঘরে শুয়ে থাকেন তাই তিনি বাইরের পরিবেশের নতুনত্ব উপভোগ করতে পারেন না। এভাবেই পরনির্ভরশীল জীবনযাপন করতে করতে রোগী খিটখিটে মেজাজের হয়ে পড়েন। বৈজ্ঞানিক ব্যায়াম না করানোয় তার প্যারালাইসড অঙ্গগুলো শক্ত হয়ে যায় এবং প্রচণ্ড ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে সম্পূর্ণরূপে পঙ্গু হয়ে যান। তখন আর তেমন কিছুই করার থাকে না। কোনো চিকিৎসাই কাজে আসে না। তাই প্যারালাইসিস রোগীর জন্য দ্রুত বিজ্ঞানসম্মত ফিজিওথেরাপি শুরু করা অবশ্য কর্তব্য। প্রয়োজনে পুনর্বাসন কেন্দ্রে ভর্তি রেখে দিনে তিন-চারবার ফিজিওথেরাপি দিতে হবে। সেটা সম্ভব না হলে একজন ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে বাসায় ফিজিওথেরাপির ব্যবস্থা করতে হবে। নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি : স্ট্রোক-প্যারালাইসিস পুনর্বাসনের অনেক পদ্ধতি আছে। এর মধ্যে বোবাথ, পিএনএফ টেকনিক উল্লেখযোগ্য, কিন্তু প্রচলিত এসব পদ্ধতির কোনোটিই আক্রান্ত মস্তিষ্কে সরাসরি উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে পারে না। এক্ষেত্রে ‘কাওয়াহিরা মেথড’ যুগান্তকারী সফলতা পেয়েছে। জাপানের কাগোশিমা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্যারালাইসিস রোগীর ওপর চালিত গবেষণায় ব্যাপক সফলতা পাওয়া গেছে।